বাজারের পতনের
সময় বোঝা যায় যে অসতর্কতার সাথে শেয়ারে বিনিয়োগ মাঝে মাঝে কাজে দিলেও চিরকাল কাজে
দেয় না। একটি ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত আপনার সারাজীবনের বিনিয়োগ থেকে অর্জন ধ্বংস
করে দিতে পারে। তাই পরবর্তী পতন ঘটার আগেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
উপরের বিষয়টি মাথায়
রেখে একটি শেয়ার ক্রয়ের আগে আমাদের নিচের ৭টি প্রশ্নের উত্তর জানা উচিত। যদিও এই
প্রশ্নগুলোর উত্তর জানলেই আপনার বিনিয়োগ ১০০% নিরাপদ হয়ে যাবে এমন না। তবে এই
প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আপনার বিনিয়োগকে তুলনামূলক নিরাপদ করে তুলতে পারে।
১। কোম্পানি কী করে?
১। কোম্পানি কী করে?
বিখ্যাত শেয়ার
ব্যবসায়ী ও বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, আমি এমন কোম্পানিতে
বিনিয়োগ করি না যাদের কার্যক্রম আমি বুঝি না। অর্থাৎ তারা কী নিয়ে ব্যবসা করে সেই
বিষয়ে আপনার যদি সামান্যতম জ্ঞান না থাকে তাহলে সেই কোম্পানি স্টকে বিনিয়োগ করা
উচিত না। কিভাবে আমরা একটি কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারব? বিভিন্নভাবে জানা যেতে
পারে, যেমন কোম্পানির ওয়েবসাইট, পত্রিকার রিপোর্ট, তাদের পন্যসারি ইত্যাদি।
২। কোম্পানি কি
লাভজনক?
কোনো কোম্পানির
স্টক কেনার আগে সেই কোম্পানি লাভজনক কিনা তা আমাদের জানা উচিত। কিভাবে তা আমরা
জানব? কোম্পানির কোয়াটারলি ও ইয়ারলি রিপোর্ট থেকে আমরা তা জানতে পারি। যদিও সেখানে
ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আছে। তবুও তাদের এই রিপোর্ট আমাদেরকে মৌলিক কিছু ধারণা অন্তত
দিতে পারে।
৩। কোম্পানির উপার্জনের
রেকর্ড কী?
কোম্পানি
সম্পর্কিত নিউজ ও তাদের অতীত কোয়াটারলি ও ইয়ারলি রিপোর্ট থেকে আমরা এই প্রশ্নের
উত্তর পেতে পারি। এখানে দেখতে হবে কোম্পানিটির আয়ের গ্রোথ দৃঢ় কিনা, স্থিতিশীল
কিনা, ইতিহাস কেমন। এছাড়াও মনে রাখতে হবে, কোম্পানি কি দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারবে?
পারলে কতদিন? অর্থাৎ কোম্পানি সৃষ্টির পর ৫/১০ বছরেই এর পণ্য বা সেবার চাহিদা শেষ
হয়ে যাবে না তো? আর এমন ৫/১০ বছর স্থায়ী হতে পারবে এমন কোম্পানির শেয়ার আমরা
একেবারে শেষের বছরে ক্রয় করছি না তো?
৪। কোম্পানির
স্টক কতটা উচ্চ মূল্যে মূল্যায়িত?
একটি কোম্পানির
উপার্জনের হার উচ্চ হওয়া খুবই চমৎকার বিষয়, তবে এর বিপরীত দিকটাও আমাদের জানতে
হবে। অর্থাৎ একটি কোম্পানির উচ্চ উপার্জন হার, এর গ্রোথ ও ভবিষ্যৎ গ্রোথের
সম্ভাবনাকে বাজার কি অতি মূল্যায়িত করে ফেলছে? যদি তাই হয়, তাহলে সেই কোম্পানি
থেকে দূরে থাকাই ভালো। একটি কোম্পানির স্টক অতি মূল্যায়িত কিনা কিভাবে আমরা বুঝব?
প্রাইস টু আর্নিং এবং প্রাইস টু সেলস রেশিয়ো এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। পিই
রেশিয়ো কিভাবে বের করতে হয় তা আমরা প্রায় সবাই জানি। প্রাইস টু সেলস রেশিয়ো বের
করাও খুবই সহজ। কোম্পানির বাজার মূলধনকে তার সর্বমোট রেভিনিউ দিয়ে ভাগ করলে অথবা
প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্যকে শেয়ার প্রতি অর্জিত রেভিনিউ দিয়ে ভাগ করলে এটা
পাওয়া যায়। এই মানদণ্ডগুলো একেবারে ১০০% সঠিক না হলেও শেয়ারটির সত্যিকার মূল্য
বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পারে।
৫। কোম্পানির প্রতিযোগী
কারা?
কোম্পানির
প্রতিযোগী কারা তা জানা খুবই জরুরি। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো কোনো কোম্পানির
বর্তমান পণ্য চাহিদায় ভাগ বসাতে পারে, ফলে তা উপার্জন কমিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে
শুধুমাত্র বর্তমান প্রতিযোগীদের দেখলে হবে না, দেখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রতিযোগীদেরও। প্রতিযোগীদের
কথা মাথায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই কোম্পানি ভবিষ্যতে টিকে থাকতে সক্ষম হবে
কিনা।
৬। কোম্পানি
চালায় কে?
এ প্রশ্নের উত্তর
জানা আমাদের দেশে বাধ্যতামূলক। কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরস কিংবা ব্যবস্থাপনা
লেভেলে কারা আছে, তাদের অতীত কোনো বাজে রেকর্ড আছে কিনা, তারা ঋণখেলাফি কিনা,
তাদের বিরুদ্ধে মামলা, ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা, তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি কী,
ইত্যাদি। যদিও আমাদের মতো চুনোপুটিদের এইসব বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। তবুও
চেষ্টা করলে কিছু না কিছু তথ্য ঠিকই বের করা যাবে। আমাদের সেটাই করতে হবে।
৭। কোম্পানির
ব্যালান্স শীট সম্পর্কে কতটুকু স্বচ্ছ ধারণা রাখি?
দীর্ঘমেয়াদী
বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি কোম্পানির ব্যালান্স শীট বুঝতে সক্ষম হওয়া খুবই জরুরি। কোম্পানির
মূলধনের গঠন কেমন, ঋণের পরিমাণ কত, গৃহীত সেই ঋণের খরচ কত, ঋণের খরচের তুলনায়
তাদের উপার্জনের হার কেমন, ঋণ পরিশোধে কোম্পানি সক্ষম কিনা, সম্পদের পরিমাণ কত,
সম্পদের মান কেমন ইত্যাদি বিষয় বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানি গবেষণা ও
উন্নয়নে কেমন অর্থ ব্যয় করছে সেটাও জানার চেষ্টা করতে হবে। যদি দেখা যায় এই বছর
থেকে কোম্পানি গবেষণার পিছনে অর্থ ব্যয় করা শুরু করেছে তাহলে ধরে নিতে হবে
কোম্পানির পণ্যের চাহিদায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যদি পূর্বে থেকে তারা
গবেষণা ও উন্নয়নের পিছনে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যাবে তারা
অনেক আগে থেকেই ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখেছিল যা একটি ভালো বিষয়।
আপনার ভবিষ্যৎ
বিনিয়োগ নিরাপদ হোক এই কামনায় এই পর্যন্ত। আপনাদের মাথায় এগুলোর বাইরে নতুন কিছু
পরামর্শ আসলে মন্তব্যে প্রকাশ করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment